বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় নিয়ে আসার ঘোষণা দেয়ার পর এনিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে।
বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থার সাথে এর পার্থক্য কতটা এবং তাতে নতুন কর্মকর্তা-কর্মচাীদের সুবিধা কোন হেরফের হবে কী না তা নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ।
চলতি বছরের পহেলা জুলাই থেকে স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থার নতুন কর্মকর্তা কর্মচারীদের এ স্কিমে নিয়ে আসার পাশাপাশি ২০২৫ সালের পহেলা জুলাই থেকে অন্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগ প্রাপ্তদের এ স্কিমে নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
এর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং অন্যান্য কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা নতুন পেনশন স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ করেছেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা এর বিরুদ্ধে কর্মবিরতি সহ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মনে করছেন, প্রস্তাবিত স্কিম চালু হলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অবসরগ্রহণকারী ব্যক্তিদের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা অনেক কমে যাবে।
তবে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, “যদি আমরা ১৮ বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিককে সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পের আওতায় আনতে পারি, তাহলে সবাই একটি সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আসবে, যা ভবিষ্যতে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে”।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১৭ই আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নামে চারটি স্কিম দিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম যাত্রা শুরু করে।
পরবর্তীতে স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘প্রত্যয়’ স্কিম চালু করা হয়েছে, যা চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়া নতুন কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকর হবে, এমনটি জানিয়ে ইতোমধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
তবে পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে পুরনো কর্মীরা আগের পদ্ধতিতেই পেনশন পাবেন এবং নতুন স্কিম কার্যকর হবে পহেলা জুলাইয়ের পর থেকে যারা যোগ দিবেন তাদের জন্য। ফলে এনিয়ে পুরনো কর্মীদের আলোচনা-সমালোচনার প্রশ্নটিই গুরুত্বহীন বলে মনে করেন তারা।
সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বিবিসি বাংলাকে বলছেন, বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশন নানা ধরণের আছে এবং সামরিক-বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই চাকরির ধরণে বিভিন্ন পার্থক্য আছে।
“সবার জন্য যথাযথ পদ্ধতি চূড়ান্ত ছাড়াও চাকরি শেষে একজন কর্মী ভালো অর্থ পাবেন যা দিয়ে তিনি অবসরজীবনে চলবেন এমন নিরাপত্তা বোধ তৈরি করাটাই নতুন স্কিমের জন্য জরুরি বলে আমি মনে করি”।