দাম বাড়তি হলেও ছোট গরুর ক্রেতা বেশি, শঙ্কায় বড় গরুর বিক্রেতারা

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঢাকার কোরবানির হাটগুলোতে ছোট আকারের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি, এরপরই রয়েছে মাঝারি গরুর চাহিদা। সেই তুলনায় যারা বড় গরু নিয়ে হাটে এসেছেন তারা ক্রেতা কম পাচ্ছেন। তবে বাড়তি চাহিদার চাপ ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ছোট গরুর দামও খানিকটা বেশি।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঢাকার কোরবানির হাটগুলোতে ছোট আকারের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি, এরপরই রয়েছে মাঝারি গরুর চাহিদা। সেই তুলনায় যারা বড় গরু নিয়ে হাটে এসেছেন তারা ক্রেতা কম পাচ্ছেন। তবে বাড়তি চাহিদার চাপ ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ছোট গরুর দামও খানিকটা বেশি।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত স্থায়ী-অস্থায়ী ২০টি হাটের মধ্যে গাবতলি, রামপুরার মেরাদিয়া, তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিকের খেলার মাঠ, হাজারীবাগ, কমলাপুরসহ কয়েকটি বাজারের ক্রেতা- বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর ক্রেতা সবচেয়ে বেশি। বিক্রেতাদের মধ্যেও যারা এই আকারের গরু নিয়ে বাজারে এসেছেন তাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে।

কুষ্টিয়ার মেহেরপুর থেকে ২১টি ছোট আকারের গরু নিয়ে মেরাদিয়া গরুর হাটে এসেছেন ব্যাপারী শরিফুল ইসলাম।

তিনি জানান, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত তার ১২টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে।

দামের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আকার ও সৌন্দর্য অনুযায়ী ১ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৩০ হাজারের মধ্যে গরুগুলো বিক্রি করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আশা করছি রবিবার পর্যন্ত সবগুলো গরু বিক্রি হয়ে যাবে। কারণ ছোট গরুর অনেক ক্রেতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর এসব গরু এমনিতেই ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। লালন-পালনের খরচ বেশি হওয়ায় খামার থেকে কিনতেও হয়েছে বেশি দাম দিয়ে।’

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারগুলোতে বৃহস্পতিবার পর্যন্তও খুব বেশি ক্রেতা ছিল না। শুক্রবার সকাল থেকেই বিক্রি বাড়তে থাকে। জুম্মার নামাজের পর থেকে ক্রেতা সমাগম আরও বেড়েছে।

বিক্রেতাদের আশা, ১৭ তারিখের আগ পর্যন্ত ক্রেতার চাপ বাড়তেই থাকবে।

কুষ্টিয়া থেকে আসা আরেক বিক্রেতা আলিম উদ্দিন জানান তিনি ৩৭টি গরু নিয়ে এসেছেন। তার গরুগুলো মাঝারি আকারের। একেকটার দাম সাইজ অনুযায়ী দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে তার ৯টি গরু বিক্রি করেছেন। শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে।

এদিকে, ক্রেতাদের অভিযোগ বিক্রেতারা এবারে অতিরিক্ত দাম চাচ্ছেন। যারা লাখ টাকা বাজেট করে বাজারে এসেছেন, তাদের বাজেট বাড়াতেই হচ্ছে।

তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিকের খেলার মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসার কথা থাকলেও সেটার শুরু হয়েছে আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির সামনের রাস্তা থেকে। একেবারে লিঙ্ক রোড, নাবিস্কো পর্যন্ত পুরো রাস্তা জুড়ে হাট বসেছে।

আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির পাশেই কথা হয় এক ক্রেতার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘আমি এবারে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বাজেট করেছি কোরবানির পশু কেনার জন্য। কিন্তু বাজারে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজারের নিচে কোনো গরু পাচ্ছি না।

এই হাট থেকেই মগবাজারের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় গরু কিনে ফিরছিলেন।

তিনি বলেন, চিন্তা ছিল এক লাখ টাকার মধ্যে গরু কিনব। কিন্তু বাজারে ছোট গরুর দাম বেশি হওয়ায় আরও ২৫ হাজার টাকা বেশি লাগল। গত বছর একই সাইজের গরু ১ লাখ ৫ হাজার টাকায় কিনেছিলাম।

অবশ্য হাকিম চৌধুরী নামের এক ক্রেতা বলেন, গাবতলি হাটে নানা জাতের গরু দেখলাম, এর মধ্যে ছোট, দেশি জাতের একটা পছন্দ হয়েছে। ৯০ হাজার টাকার মধ্যেই ছেলের পছন্দের লাল গরু কিনলাম। বাজারে গরুর সরবরাহের তুলনায় চাহিদা কম, দামও একটু বেশি।

এদিকে বড় গরু বাজারে এনে অনেকটা বিপদে পড়ার কথা জানালেন গাবতলির বিক্রেতারা।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের আলীশান ডেইরি ফার্ম এর মালিক বলেন, বৃহস্পতিবার ৭০টি শাহিওয়াল জাতের গরু এনেছি বাজারে। এগুলোর একেকটির দাম ৮ থেকে ১২ লাখ টাকার মধ্যে। এখনো পর্যন্ত মাত্র একটি গরু বিক্রি হয়েছে। খুব বেশি ক্রেতা আসছে না।

এই বিক্রেতা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার প্রডাকশন কস্ট অনেক বেড়েছে। খাদ্যের দামই তো গত এক বছরে হিসেব করলে ৪০-৫০ শতাংশ বেশি। বিদ্যুৎ, শ্রমিকের মজুরি থেকে শুরু করে সব খরচই বেড়েছে। অথচ এখন তো বিক্রি করা নিয়েই শঙ্কায় পড়ে গেছি।

একই অবস্থা টাঙ্গাইল থেকে আসা মো. জমির মিয়ায়। তিনিও ৭টি বিদেশি জাতের বড় গরু এনেছেন।

তিনি বলেন, ক্রেতা নেই বললেই চলে। একেকটি গরুর দাম ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা, এখনও একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি।

গাবতলী বাজারের ইজারাদার কর্তৃপক্ষের একজন ক্যাশিয়ার রানা হামিদ বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব গরু বিক্রি হয়েছে সেগুলোর ৯০ শতাংশই দেশি জাতের এবং ছোট- মাঝারি সাইজের গরু। শেষ দুদিনে হয়ত বড় গরুর ক্রেতা বাড়বে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি হাটেই ছোট, মাঝারি ও বড় গরু রয়েছে। গরু-ছাগল কোনো পশুরই কমতি নেই। যে কারণে হাটগুলোতে নির্ধারিত স্থান ছাড়াও বাড়তি জায়গা নিয়ে পশু বাধা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহস্পতিবার থেকে হাট শুরু হয়েছে। শুক্রবার ছাড়াও ইদের আগে আরও দুদিন সময় রয়েছে। শেষ সময়ে বিক্রেতারাও দামে অনেক সময় সমঝোতা করে থাকেন।

মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর ১ কোটি ৭ লাখ ২৩৯৪টি পশুর চাহিদার বিপরীতে দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সরবরাহ রয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি।

মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান জানান, এবারে চাহিদার তুলনায় ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩টি কোরবানির পশু বেশি রয়েছে। যা আমাদের দেশেই লালন-পালন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষের সক্ষমতার সঙ্গে তাল মিলিয়েই প্রতি বছর পশু কোরবানি হয়ে থাকে। এ বছর কোরবানির সক্ষমতার ক্ষেত্রে বছরজুড়ে ১০ শতাংশের কাছাকাছি মূল্যস্ফীতির যে চাপ, তারও একটা প্রভাব পড়তে পারে। একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ, অন্যদিকে বাড়তি উৎপাদন খরচ; তাই ক্রেতাদের নজর ছোট গরুর দিকে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির কারণে এবারে ছোট গরুতে একটা বাড়তি চাপ থাকবে। অন্যদিকে আবার গরুর উৎপাদন খরচে শুধু খাদ্যের দামই ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর অনলাইনে লাইভওয়েট হিসেব করে ৪৮০-৫০০ টাকা কেজি দরে যেসব গরু বিক্রি হয়েছে, এবছর সেগুলোই আকারভেদে ৫০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করতে হয়েছে।’

প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ‘উৎপাদন খরচ বেড়েছে এটা সত্য। কিন্তু কোরবানির পশুর কিন্তু সংকট নেই, বাজারগুলোতে প্রচুর দেশি গরু রয়েছে।’

প্রাণীসমপদ অধিদপ্তর জানায়, ২০২৩ সালে পশু কোরবানি হয়েছে ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি। এর মধ্যে ৪৫ লাখ ৮১ হাজার ছিল শুধু গরু।

এছাড়া ১ লাখ ৭৮ হাজার মহিষ, ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার ছাগল এবং কয়েক লাখ অন্যান্য পশু কোরবানি হয়। যার বাজার মূল্য ছিল ৬৪ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। যা ২০১৭ সালে ছিল ৪২ হাজার কোটি টাকা।

 

 

Share this article

সাবস্ক্রাইব

সাবস্ক্রাইব বোতাম টিপে, আপনি নিশ্চিত করেন যে আপনি আমাদের গোপনীয়তা নীতি পড়েছেন।
এখানে আপনার বিজ্ঞাপন দিন

More News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *